মাথার চুল পড়ে যাওয়া কারণ


মাথার চুল পড়ে যাওয়া

দিন দিন মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ঝরে যাচ্ছে বা টাক পড়ে যাচ্ছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। চুল ঝরে যাওয়া বা টাক পড়া দু’ভাবে হয়ে থাকেঃ

এক. পুরো মাথার চুল পড়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে মাথার তালু বা চামড়া অতি সহজেই দেখা যায়।

দুই. মাথার কিছু কিছু অংশে গোল গোল আকারে চুল পড়ে যাওয়া।

সার্বিকভাবে পুরো মাথার চুল যেসব কারণে ঝরতে পারে
চুলে টান লাগাঃ প্রচলিত একটি ধারণা আছে, রাতে শোয়ার আগে টান টান করে বেণী বেঁধে ঘুমালে চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। চুল কতটুকু লম্বা হবে তা নির্ভর করে জেনেটিক, হরমোন ও পুষ্টির ওপর। বরং উল্টো ক্ষতিই হয়ে থাকে। যে চুলগুলো আরো কিছু দিন মাথায় থেকে তারপর ঝরে যাওয়ার কথা, তা আগেই ঝরে যায় অতিরিক্ত টান লাগার কারণে।

প্রসব পরবর্তীঃ সন্তান প্রসবের দুই থেকে পাঁচ মাস পর হঠাৎ চুল পড়ে যেতে থাকে। মাথা প্রায় খালিই হয়ে যায়। ২ থেকে ৬ মাস ধরে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তবে আশার বিষয়, এ চুল আবার সম্পূর্ণ গজিয়ে থাকে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকুন।
নবজাত অবস্থায়ঃ নবজাতকের মাথার চুল জন্মের পর থেকে ৪ মাসের ভেতর অনেকটা ঝরে যায়। এতে মা-বাবা ভয় পেয়ে যান, আমার সন্তানের মাথার চুল কি কম হবে? না, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ৬ মাস বয়সের সময় আবার চুল গজায়। কখনো কখনো পুষ্টিহীনতার কারণে চুল গজাতে একটু দেরি হতে পারে।

জ্বরের পরঃ কঠিন কোনো জ্বর যেমন­ নিউমোনিয়া, টাইফয়েড হওয়ার ২ থেকে ৪ মাস পর হঠাৎ চুল ঝরতে শুরু করে এবং প্রায় পাতলা হয়ে যায়। কিন্তু কিছু দিন পর এ চুল আবার গজিয়ে থাকে।

মানসিক কারণেঃ মানসিক রোগ বা দুশ্চিন্তা যদি বেশি থাকে তবে চুল পড়ে যায়।
ওষুধেঃ কিছু কিছু ওষুধে যেমন ক্যান্সারের ওষুধ, যে চুলগুলো মাত্র গজাচ্ছে, সেগুলোও ঝরিয়ে দেয়।

অনাহারঃ ওজন বা মেদ কমানোর জন্য অনেকে হঠাৎ খাওয়া-দাওয়া, একেবারেই ছেড়ে দেয়। এই হঠাৎ খাওয়া কমানো চুল পড়ার কারণ হতে পারে, যেমনটি হয় অপুষ্টিজনিত কারণে।

অ্যানড্রোজেন হরমোনঃ পুরুষ হরমোনের প্রভাবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে পুরুষের কপালের দুই দিকে এবং মাথার মধ্য অংশে টাক পড়ে। যাকে বংশগত টাকও বলা হয়।

এজাতীয় বংশগত টাক ঠেকাতে এবং টাক পড়া স্থানে কিছু চুল গজাতে সক্ষম এমন ওষুধ এখন বাজারে পাওয়া যায়। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনাস্টেরয়েড। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এ জাতীয় ওষুধ শুধু ছেলেদের জন্য। মেয়েরা খেতে পারবে না। মাথার চুলের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ, এর মধ্যে ৭০ থেকে ১০০টি চুল প্রতিদিন ঝরে যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই ১০০টির বেশি চুল পড়ে তখনই মাথার তালু খালি হয়ে যেতে থাকে।

মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খুশকি। মাথা চুলকালে গুঁড়ো গুঁড়ো খোসা দেখা যাওয়াটাকে খুশকি বলে। তবে কখনো কখনও খোসা দেখা যায় না, মাথায় শুধু তেলতেলে ভাব থাকে। এই খুশকি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তবে মাথার চুল আছে তাকে হয়তো আরো ১০ থেকে ২০ বছর টিকিয়ে রাখা যাবে। অন্যথায় ৫ মাস থেকে এক বছরে মাথায় টাক পড়ে যাবে। তবে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো খুশকি বা তেলতেলে ভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হরমোন (এনড্রোজেন)-এর প্রভাবে হয়ে থাকে। সুতরাং এমতাবস্থায় খুশকিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, আর খুশকি হবে না এটা সম্ভব নয়। যেহেতু এনড্রোজেন হরমোন কমানো উচিত নয়। অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে খোসা খোসা ভাব খুশকি খুব দ্রুত নির্মূল হয়ে যায়। কিন্তু তেলতেলে ভাব তো প্রতিদিনই হয়। অন্য দিকে অ্যান্টিডেনড্রাফ শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার করা যায় না, তাতে চুলের ক্ষতি হয়। তা হলে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে­ খোসা খোসা ভাব খুশকি দূর করা সম্ভব হচ্ছে, চুল পড়া রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় প্রয়োজন প্রতিদিন এমন কিছু দিয়ে মাথা ধুতে হবে যাতে চুলের ক্ষতি না হয়। এ সিস্টেমে খুশকি হয়তো ভালো হবে না তবে খুশকি ও তেলতেলে ভাব নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং চুলও কম ঝরবে।
মাথার গোল টাকঃ এ অবস্থায় রোগী কোনো এক দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে যে মাথায় কিছু কিছু অংশে গোলাকার টাক পড়েছে। আক্রান্ত স্থানের ত্বক মসৃণ, কোনো চুলকানি বা লালা ভাব নেই, কোনো খোসাও নেই। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে তেলাপোকা চুল খেয়ে ফেলেছে। না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ অবস্থা বেড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ মাথায় এমনকি শরীরের লোমও ঝরে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে আকারে বেড়ে যাওয়াটাকে রোধ করা যায় এবং নতুন চুল গজাতে থাকে। প্রতি মাসে একবার ইনজেকশন দিতে হয়।
..........................................................................................................
ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)।
.............................................................................................................


টাক


টাক ( Baldness) বলতে চুলের অভাবকে বোঝায়, বিশেষ করে মাথার চুল। মাথার চুল ক্রমাগত হালকা হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সাধারণত টাক হওয়া প্রকাশ পায়। পুরুষের ক্ষেত্রে এটি অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া বা "পুরুষের টাক" নামে পরিচিত। এটি পরিণত মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতিতে দেখা যায়। টাকের পরিমাণ ও বিস্তৃতি অনেক বেশি হতে পারে এবং এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। মাথার কিছু অংশের চুল পড়ে যাওয়াকে অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা ও পুরো মাথার চুল পড়ে যাওয়াকে অ্যালোপেসিয়া টোটালিস বলে। চুল পড়ে যাওয়ার আরো একটি মারাত্মক প্রকাশ হচ্ছে অ্যালোপেসিয়া ইউনিভার্সালিস। এক্ষেত্রে মাথাসহ সমস্ত শরীরের লোম ঝরে যায়।
আংশিক টাক বা Pattern baldness-এর ক্ষেত্রে বংশগতির পটভূমির ওপর ভিত্তি করে টাকের বিস্তার ও প্রাদুর্ভাব বিভিন্ন হয়। পরিবেশগত প্রভাব এই ধরনের মুণ্ডতার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। মেরিব্রাউ, অস্ট্রেলিয়া, ভিক্টোরিয়া একটি সূচক গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, মাথার সামনের মাঝে চুল ঝরে পড়ার হার বয়সের ওপর নির্ভরশীল ও ৮০ বছরের উপর বয়সী ৫৭% নারী ও ৭৩.৫% পুরুষ এর দ্বারা আক্রান্ত। মডার্ন মেডিক্যাল লাইব্রেরি'র ওয়েবসাইটের ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি পুরুষ আংশিক টাকের শিকার। প্রায় ২৫% পুরুষের ৩০ বছর বয়সের পরেই মাথা টাক হওয়া শুরু হয়। দুই-তৃতীয়াংশের শুরু হয় ৬০ বছর বয়সে। মুণ্ডতার জিন প্রাপ্তির সম্ভাবনা সেখানে প্রতি ৭-এ ৪ বার।
পুরুষের ক্ষেত্রে টাক সৃষ্টি হতে পারে এই ধরনের চুল কপালে পার্শ্বীয় অংশ থেকে শুরু হয়ে পেছনে ঢালু অংশের দিক পর্যন্ত বিস্তৃত। একে "প্রান্তীয় অংশের চুল" বলে অভিহিত করা হয়। এ স্থানে চুল সচরাচর ২০ বছর বয়সের পরে দেখা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির শেষ ভাগেও এই চুল দেখা যায়।
মাথার উপরে, শীর্ষে টাক সৃষ্টির সম্ভবনা দেখা যায়। আংশিক টাকের কারণ হিসেবে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) নামক একটি শক্তিশালী যৌন হরমোনকে দায়ী করা হয়। এটি শরীর ও মুখের চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তামূলক ভূমিকা রাখে। প্রোস্টেট ও মাথার চুলের ওপর এই হরমোন প্রতিকুল প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে, এর ফলে পুরুষে আংশিক টাকের সৃষ্টি হতে পারে।